চীনের চাংশা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্থাগারের সামনে একুশের চেতনায় বাংলা উইকিপিডিয়া সমৃদ্ধ করার আহ্বান। ছবি: সাকিব রেজা পিয়াল যা উইকিমিডিয়া কমন্সে সিসি-বাই-এসএ ৪.০ লাইসেন্সের আওতায় প্রকাশিত।
২১শেফেব্রুয়ারিতে, ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার বিষয়বস্তু বা কনটেন্ট সমৃদ্ধ করার তাগিদে একুশের চেতনায় উজ্জীবিত তরুণদের বাংলা উইকিপিডিয়াকে (http://bn.wikipedia.org) সমৃদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও রাজশাহীতে উইকিপিডিয়ানদের এক সমাবেশ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।
২০০৪ সালের ২৭ জানুয়ারি বাংলা উইকিপিডিয়ার যাত্রা শুরু হয়। তখন থেকেই একদল স্বেচ্ছাসেবী অবদানকারী ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার বিষয়বস্তু সমৃদ্ধি ও বাংলা ভাষায় একটি পূর্ণাঙ্গ মুক্ত বিশ্বকোষ সৃষ্টির লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। কোন একটি নিবন্ধ প্রথমে কেউ একজন তৈরি করেন, পরবর্তীতে সবাই মিলে সেই ভূক্তিতে কাজ করেন ও তথ্য যুক্ত করেন। উইকিপিডিয়ায় প্রতিটি নিবন্ধে বা ভূক্তিতে কোন নির্দিষ্ট একজনের অবদান নয় বরং সম্মিলিতভাবে সবাই মিলে কোন একটি ভূক্তিকে পূর্ণতা দানের চেষ্টা করেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বেশ কিছু মাধ্যমে প্রচারিত ‘অর্থের বিনিময়ে উইকিপিডিয়ায় নিবন্ধ তৈরি’-এর বিজ্ঞাপন ‘উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ’-এর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এমন ফাঁদে প্রতারিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
২০১৮ সালে সারা বিশ্ব থেকে বাংলা উইকিপিডিয়া (https://bn.wikipedia.org) দেখা হয়েছে ১৮ কোটি ৭৪ লক্ষ ৯০ হাজার বার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৫ লক্ষ ১৩ হাজার ৬৭৮ বার দেখা হয়েছে। তবে সব ভাষার উইকিপিডিয়া প্রকল্প মিলিয়ে দেখা যায় বৈশ্বিকভাবে উইকিপিডিয়ার বিভিন্ন প্রকল্প শুধু ২০১৮ সালেই দেখা হয়েছে ‘১৯০ বিলিয়ন’ বার।
আব্দুল মুমিনের তোলা রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ির পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দিরের এই ছবিটি চতুর্থ স্থান লাভ করেছে।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডধারী বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ‘উইকি লাভস মনুমেন্টস’ (ডব্লিউএলএম)-এ ৫৬টি দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশের ৪টি আলোকচিত্র সেরা ১৫তে স্থান করে নিয়েছে। চূড়ান্ত বিজয়ী তালিকা অনুযায়ী, আব্দুল মুমিনের তোলা রাজশাহীর প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট পুঠিয়া রাজবাড়ির পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দিরের একটি আলোকচিত্র চতুর্থ ও শাহরিয়ার আমিন ফাহিমের তোলা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের একটি আলোকচিত্র পঞ্চম স্থান লাভ করেছে।
উইকিপিডিয়ায় বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের জীবনী সংক্রান্ত নিবন্ধে ছবি প্রয়োজন। আপনারা জানেন, উইকিপিডিয়া একটি মুক্ত বিশ্বকোষ। এখানে ইতিহাস, ধর্ম, যুদ্ধ, সংস্কৃতি বিষয়ক নিবন্ধ যেমন আছে ঠিক তেমনি জীবনী সংক্রান্ত নিবন্ধও রয়েছে।
অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, এ বছর বাংলাদেশের তিনটি ছবি সংরক্ষিত অঞ্চল ও এর জীববৈচিত্রের ছবি নিয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ‘উইকি লাভস আর্থ (ডব্লিউএলই)’ এর চূড়ান্ত বিজয়ী তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী সেরা ১৫টি ছবির মধ্যে বাংলাদেশের আব্দুল মুমিনের তোলা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের একটি ছবি তৃতীয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে তার তোলা বন বাটনের অপর একটি ছবি অষ্টম এবং শাহেনশাহ বাপ্পির তোলা কাঠ শালিকের একটি ছবি ১২তম স্থান লাভ করেছে।
অপরদিকে, রাশিয়ার একাতেরিনা ভাসেজিনার তোলা সাখালিন দ্বীপের ছবি ও ইলায়া তিমিনের তোলা রাশিয়ান আর্কটিক জাতীয় উদ্যানের ছবি যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছে। চলতি বছর এ প্রতিযোগিতায় ৩২টি দেশের ৭ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী প্রায় ৯০ হাজার ছবি নিয়ে অংশগ্রহণ করে।
গত সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিক ভাবে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের আয়োজনে এ প্রতিযোগিতায় চলতি বছর দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। এবার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পর্বে ৩৭১ জন অংশগ্রহণকারী ২৮০০ ছবি জমা দিয়েছেন। সেখান থেকে বিজয়ী সেরা ১০টি ছবি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে এ প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়। আন্তর্জাতিক এ আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা প্রতিবছর মে মাসে বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো স্ব-স্ব সংরক্ষিত অঞ্চলের ছবি নিয়ে অংশগ্রহণ করে। এ বছর প্রতিযোগিতার সহযোগী হিসেবে ছিল ইউনেস্কোর বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ নেটওয়ার্ক।